
মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন নিয়ে বিজিবি-শ্রমিকদের সংঘর্ষ আহত ১২ আটক ৪ জন
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ-তেঁতুলিয়ায় সীমান্ত প্রবাহিত নদী মহানন্দায় পাথর তোলাকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও স্থানীয় পাথর শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।আজ শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ভাদ্রবাড়ি এলাকায় মহানন্দা নদীতে পাথর তুলতে গেলে বাধা দেয় বিজিবি। দুপুরে নদী থেকে পাথর ট্রলিতে নিয়ে আসার সময় তিনটি ট্রলি আটক করলে বিজিবির সাথে শ্রমিকদের চড়াও হলে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় শ্রমিকরা বিজিবি সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে বলে জানা যায়।
জানা যায়, আজ শনিবার সকাল থেকে রণচন্ডী বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সীমান্ত পিলার ৪৪৫/১৭ এস হতে ভাদ্রবাড়ি এলাকায় টহলরত ছিলের বিজিবির সদস্যরা। বেলা ১১টার দিকে মহানন্দা নদী থেকে বালি ও পাথর বোঝাই ০৩ টি ট্রলি আটক করে বিজিবি। এতে বিজিবির সাথে শ্রমিককের মধ্যে কথাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ঘটে।

খবর পেয়ে তেঁতুলিয়ার ইউএনও ফজলে রাব্বি, উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মীমাংসার জন্য বসেন। এ সময়ের মধ্যে পঞ্চগড় থেকে দুটি পিকআপে বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসার পর আবার সংঘর্ষ তৈরি হয়। বিজিবির লাঠি চার্জে বেশ ১২ আহত হওয়ার ঘটে। তাদেরকে তেঁতুলিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আটকৃতরা হলেন, আহতরা হলেন, ভাদ্রবাড়ি এলাকার আমিনুর (২৮), সবিরন (৭০), ইমারন (৭০), মালতি (৩৫), আকলিমা (৪০), আতুল (৪০), ছালেমা (৭০), আঞ্জুনা, জোসনা, আঞ্জুনা (৩০), সালেকা (৫২) ও সরকারপাড়া এলাকার রাসেল (৩২)।
এদিকে বিজিবির উপর আক্রমণ করার অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে বিজিবি। আটককৃতরা হলেন, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভাদ্রবাড়ি এলাকার ট্রাক্টর চালক সোলেমান আলী (৩০), একই এলাকার পাথর ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম (২৪), রণচন্ডী এলাকার ট্রাক্টর চালক অমিত হাসান (২৩) ও পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার ট্রাক্টর চালক শিমুল হাসান (২৮)।
বিকেলে আহতদের মধ্যে আকলিমা, মালতী রানীসহ কয়েকজন জানান, মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন করতে গেলে বাধা দেয় বিজিবি। দুপুরে কয়েক গাড়ি বিজিবি এসে আমাদের মারধর শুরু করে। লোকজনকে গুলির ভয় দেখায়। আমাদের ও স্বামীকে মারধর করে আহত করেছে তারা। তাদের লাঠি চার্জে যন্ত্রণা হচ্ছে।
এ দিকে এ ঘটনাটি নিয়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলা চত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু, নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বী, মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সাঈদ চৌধুরী, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকীসহ পাথর শ্রমিকরা। বিষয়টি নিয়ে সমাধানের চেষ্টা চলছে জানান তারা।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে কর্নেল যুবায়েদ হাসান বলেন, সীমানা অতিক্রম করে একটি চক্র পাথর উত্তোলন করে গেলে বিজিবি বাধা দেয়। এ সময় তারা আমাদের ৬/৭ জন্য বিজিবি সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এর ফাঁকে সীমান্ত থেকে ট্রাক্টরগুলো সরিয়ে নেয় তারা। পরে আমাদের সদস্যরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় ৪ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। লাঠিচার্জের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যে।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় চারজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ্য করেছে বিজিবি। বিজিবির পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বিকেল পাঁচটার সময় উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনিক ও জনপ্রতিনিধিসহ শ্রমিকদের নিয়ে বসা হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।