রবিবার,২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কর, মূল্যবৃদ্ধি ও বৈষম্যের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রত্যাখান করে বাসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার বিক্ষোভ সমাবেশ

কর, মূল্যবৃদ্ধি ও বৈষম্যের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রত্যাখান করে বাসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার বিক্ষোভ সমাবেশ

নিউজ ডেস্কঃ– কর, মূল্যবৃদ্ধি ও বৈষম্যের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রত্যাখান করে বাসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় আজ বিকাল ৪টায় নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ চট্টগ্রাম জেলার সদস্য ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম জেলা আহবায়ক হেলাল উদ্দিন কবির, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সদস্য আহমদ জসীম, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম চট্টগ্রাম জেলার আহবায়ক জোবাইর বীণা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ। সমাবেশ পরিচালনা করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি মিরাজ উদ্দিন।

বক্তারা বলেন, বড় বাজেটের নামে ভ্যাট ট্যাক্সের বোঝা জনগণের উপর চাপানো হয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশের বয়স যত বাড়ছে, বাজেটের আকার তত বড় হচ্ছে। এবারের বাজেটও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। এবারের বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৫ শতাংশ। এই পরিমাণ টাকা আসবে কোথা থেকে? বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয় আসবে বলে সরকার ধরে নিচ্ছে। এ আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর মাধ্যমে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস হতে ৭০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা যা জিডিপির ৫.২ শতাংশ। কিন্তু ঘাটতি বাজেট হলেও সরকারকে খরচ তো করতেই হবে। তাই ঘাটতি পূরণের উপায় হিসেবে বলা হয়েছে, ঘাটতি পূরণ (অর্থসংস্থান) করা হবে দুইভাবে-দৈশিক ঋণ ও অভ্যন্তরীণ ঋণ নিয়ে। বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে নিট ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, আর সঞ্চয়পত্র বিক্রিসহ ব্যাংক বহির্ভূত ঋণ নেওয়া হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। গত এপ্রিলে এসে দেখা গেল প্রয়োজন আরও বেশি। ফলে ব্যাংকঋণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা যা বর্তমান অর্থবছরের ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার তুলনায় ২৬ হাজার কোটি বা ২৪ শতাংশ বেশি। এর ফলে ঘাটতি পূরণ হয়তো হবে কিন্তু মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে বহুগুন।
বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, কর্ম সংস্থানের ক্ষেত্রে বরাদ্দ তুলনামুলকভাবে না বাড়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা যা গত বাজেটে ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। সেই ৫ শতাংশের ঘরেই থেকে গেল স্বাস্থ্য বাজেট। করোনার আঘাত, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি, চিকিৎসা ব্যায়ের ৭২ শতাংশ জনগণের নিজেদের পকেট থেকে ব্যয় করার তথ্য জানা থাকার পরও স্বাস্থ্য খাতে কিন্তু বরাদ্দ বাড়লো না উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। যে কোন রাষ্ট্রের জন্য শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা গত বাজেটে ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা গত অর্থবছরে ছিল ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, যা গত বছরে ছিল ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দাঁড়ালো ১১.৫৮ শতাংশ। যা ছাত্র সমাজের দীর্ঘদিনের আকাংখা আর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার সাথে কি সঙ্গতিপূর্ণ হলো কি? যে কৃষি দেশের অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের প্রধান খাত সেই খাতে বরাদ্দের পরিমাণটাও দেখা যাক। কৃষি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা যা গত বছরে ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। মোট বাজেটের ৪.৬৪ শতাংশ। খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে এত উদ্বেগ সত্তে¡ও কৃষি খাতে বরাদ্দ কি প্রয়োজন পূরণের মতো হয়েছে, সে প্রশ্ন করাই যায়।
প্রতি বছর শ্রম বাজারে আগত ২০ লাখ কর্ম প্রত্যাশীদের কর্ম সংস্থানের বিষয়ে উদ্বেগ যত আছে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী দক্ষতার ঘাটতি যত উদ্বেগ তৈরি করেছে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাজেটের বরাদ্দ তেমন দৃশ্যমান নয়।
সামগ্রিকভাবে এই বাজেট পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক শোষণমূলক ব্যবস্থার ভিত্তিকে আরও সম্প্রসারিত করবে, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আরও প্রান্তসীমায় ঠেলে দেবে, বৈষম্য বৃদ্ধি করবে।
বক্তারা সমাবেশে, এই বাজেট প্রত্যাখ্যান করে, ব্যবস্থা পাল্টানোর সংগ্রামে যুক্ত হওয়ার জন্য সর্বস্তরের জনগণকে আহবান জানান।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email