
বংশদীপ স্মৃতি তোরণ নির্মানের শুভ সূচনায় প্রজ্ঞাসারথী প্রজ্ঞানন্দ মহাস্থবির
শিক্ষক মিলন কান্তি বড়ুয়া
বীর চট্টলার ঐতিহাসিক পটিয়া উপজেলার নান্দনিক বৌদ্ধ পুণ্যতীর্থ, বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবির মহাত্মনের সাধনপীঠ “কর্তালা বেলখাইন সদ্ধর্মালংকার বিহার” এর প্রবেশদ্বার “বংশদীপ স্মৃতি তোরণ” নির্মানের শুভ সূচনা করেন, ২১ মার্চ ২০২৪ ইংরেজি, আজীবন বিহারাধ্যক্ষ, প্রজ্ঞাসারথী প্রজ্ঞানন্দ মহাস্থবির, ভদন্ত বোধিপ্রিয় মহাথের ও ভদন্ত সুমনাতিষ্য স্থবির প্রমূখ বিহারে অবস্থানরত পূজ্য ভিক্ষুসংঘ, শ্রামনসংঘ, সেবকসংঘ উপস্থিত গ্রামদ্বয়ের সুধীবৃন্দ ও যুবসমাজ।
বৌদ্ধ কৃষ্টি সংস্কৃতির ভূবনে উজ্জ্বল নক্ষত্র, বৌদ্ধ থেরবাদ প্রচার প্রসারের অন্যতম সংস্কারক, বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবির মহাত্মের ৫৩তম স্মৃতি বার্ষিকী বাইশে ফাল্গুন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৬মার্চ ২০২৪ ইং তালসরা মূৎসুদ্দিপাড়া বিবেকারাম বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত সৌম্যসারথী শাসনমিত্র মহাস্থবির মহোদয় দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ সম্বৃদ্ধ “বংশদীপ স্মৃতি তোরণ” এর তৃতীয় সংস্করণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাস্থবিরের সার্বিক সহযোগিতায়, দীপংকর চৌধুরী, তাঁর পরিবারবর্গ, ডিজাইনার উত্তম বড়ুয়া, কর্তালা বেলখাইন গ্রামবাসী ও উদীয়মান যুবসমাজ তথা দূরদূরান্ত থেকে আগত অতিথিবৃন্দের উপস্থিতিতে।
ঐতিহ্যবাহী পুন্যতীর্থ কর্তালা বেলখাইন সদ্ধর্মালংকার বিহারের তোরণের পূর্ব নাম ছিলো, “বংশদীপ তোরণ”। সদ্ধর্মালকার এ প্রথম তোরণ টি আমি দেখি নাই কিংবা দেখলেও স্মরণ করতে পারছিনা। বিহার প্রতিষ্টার পর হতে বংশপরম্পরায় একই পরিবারের সদস্যবৃন্দ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার তোরণ দান করতে যাচ্ছেন।
দক্ষিণ চট্টলার শিক্ষা, কৃষ্টি সংস্কৃতিতে অগ্রসর বৌদ্ধ পল্লী ঐতিহ্যবাহী কর্তালা গ্রাম। এ গ্রামের সম্ভ্রান্ত চৌধুরী বংশের সুসন্তান, সদ্ধর্মের উন্নয়নে ও শিক্ষা বিস্তারে সৃজনশীল প্রতিভা দীপ্ত সমাজ সেবক প্রয়াত প্রিয়নাথ চৌধুরী প্রথম বিহারে তোরণ দান করেন। দ্বিতীয় সংস্করনে তদ্বীয় পুত্র সন্তানগণ প্রয়াত দীপক রন্জন চৌধুরী, প্রয়াত দীনেশ চৌধুরী ( ড ধম্মবিরিয়ো মহাথের), দেবপাল চৌধুরী ও দীপংকর চৌধুরী। তৃতীয় সংস্করণে মহতী উদ্যোগে এগিয়ে আসেন দীপংকর চৌধুরী।
কর্তালা বেলখাইন সদ্ধর্মালংকার বিহারের অবকাঠামো উন্নয়নে বংশানুক্রমে প্রয়াত প্রিয়নাথ চৌধুরীর সমাজ মনস্ক সুসন্তান ড ধম্মবিরিয়ো মহাথের, অখিল ভারতীয় মহামান্য সংঘনায়ক, প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় ভারতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান, অনেক ধর্মীয়, সামাজিক, মানবিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অনাথালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের সমন্বয়কারী ড ধম্মবিরিয়ো মহাথের তৎকালীন ভারতীয় প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দ্রিরা গান্ধী নিকট সনিবর্ন্ধ অনুরোধ জ্ঞাপন করেন। পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাংলার আপামর জনসাধারণ কে রক্ষা করার জন্য আবেদন করেন। ভারতে আশ্রয় কৃত শরনার্থীদের জন্য ত্রান সংগ্রহ ও বিতরন করে স্বদেশ প্রেমের উজ্জ্বল দুষ্টান্ত স্থাপন করেন।
প্রয়াত দেবপাল চৌধুরী, বিশিষ্ট সংগঠক, প্রগতিশীল রাজনৈতিক নীতি আদর্শে বিশ্বাসী, সংস্কৃতজন, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, কর্তালা মিতালি সংস্থার প্রতিষ্ঠা সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ বৌদ্ধ যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সহ আরও অনেক সামাজিক, সমবায়ী, সাংস্কৃতিক, সাহিত্য ও নাট্য সংগঠনের মূখ্য সংগঠকের দায়িত্ব নিষ্টার সাথে পালন করেন। উঁনার জীবনের শেষ সময় টুকুও বিহারের সেবা মূলক কাজ শেষ করে প্রায় এক ঘন্টা পর বাড়িতে ডুকেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অকালেই নিভে গেলো, দেবপাল চৌধুরীর জীবন প্রদীপ।
বাবু দীপংকর চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, দানশীল ব্যক্তিত্ব ও প্রচার বিমূখ সমাজ কর্মী। সদ্ধর্মালাংকার বিহার ও চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের ধার্মিক উপাসক। তাঁদের অগ্রজ ভ্রাতা প্রয়াত দীপক রন্জন চৌধুরী ভারতে অবস্থান করতেন। উঁনার সম্পর্কে তেমন কিছু আমার জানা নেই তবে “বংশদীপ তোরণ” এ দাতা তালিকায় উঁনার নাম দেখেছি।

কর্তালা বেলখাইন গ্রামে ধর্ম বিনয় শিক্ষা ও এলাকার সাধারণ শিক্ষা বিস্তারে স্বনামধন্য সামাজিক ব্যক্তিত্ব প্রিয়নাথ চৌধুরী পরিবারের সন্তানগণের অবদান যা কালের সাক্ষী হয়ে আছে এবং থাকবে। যে সকল দৃষ্টি নন্দন স্থাপনা সদ্ধর্মালংকার বিহারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে, তা বংশদীপ স্মৃতি চৈত্য, বংশদীপ ভিক্ষু নিবাস ও নির্মানাধীন “বংশদীপ স্মৃতি তোরণ” এবং উনাইনপুরা গ্রামে আাচারিয় পূর্নাচার চন্দ্রমোহন স্মৃতি চৈত্য ও কর্মযোগী কৃপাশরণ মহাস্থবিরের স্মৃতি চৈত্য পুনঃনির্মাণ উল্লেখযোগ্য। এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে কর্তালা বেলখাইন মহাবোধি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান তোরণ ও চল্লিশ টি ফ্যান সহ ভারতে বহু জনহিতকর প্রতিষ্ঠানে দানহস্ত প্রসারিত করেছেন। কর্মবীর ভদন্ত ড ধম্মবিরিয়ো মহাথের’র বর্ণাঢ্য ত্যাগময় জীবনে সদ্ধর্মের উন্নয়নে, শিক্ষা বিস্তারে ও মানবিক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারতীয় রাষ্ট্রীয় পদক বিজয়শ্রী, বিজয়রত্ন, ভারতজ্যোতি উপাধিতে ভূষিত ও সম্মান লাভ করেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃক বিরল সম্মাননা লাভ করে গ্রামের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন।