
বেতার-টেলিভিশন এর উচ্চাঙ্গ ও নজরুল সংগীত শিল্পী ননী গোপাল আচার্যের স্মৃতি কথা
––বিজয় শংকর চৌধুরী(অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক)
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম শাকপুরা গ্রামের বিশিষ্ট উচ্চাঙ্গ ও নজরুল সংগীত শিল্পী ও শিক্ষক ওস্তাদ ননী গোপাল আচার্য গত ২৩ জুলাই, ২০২৩ ভোর রাতে নিজ বাড়িতে পরলোকে গমন করেন। উনার পিতা – শহীদ দয়াল হরি আচার্য, মাতা – অনিমা আচার্য । জন্ম-৩১ আগস্ট, ১১৯৪৬ খ্রিঃ.
উনার বয়স যখন ৫/৬ বছর তখন তিনি শহীদ ওস্তাদ বিশ্বেশ্বর আচার্যের কাছ থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের হাতে খড়ি হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে ভারতের প্রথিতযশা ওস্তাদ সুরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর নিকট বোম্বাই ঘরানায় তালিম নেন। পরে করিমগঞ্জে তিলক নারায়ন মিউজিক কলেজ থেকে ওস্তাদ রানু দত্তের কাছে তিন বর্ষ পর্যন্ত তালিম নেন। এরপর বাংলাদেশের সিলেট জেলার প্রথিতযশা ওস্তাদ রাম কানাই দাশের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নেন। সেই সময় সিলেট থাকাকালীন সময়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার সুবাদে ৪/১/১৯৮০ সালে সিলেট বেতারে রাগপ্রধান / নজরুল গীতিতে শিল্পী হবার গৌরব অর্জন করেন। ছোট কাল থেকে ওস্তাদ শহীদ বিশ্বেশ্বর আচার্যের ছোঁয়ায় বংশীবাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন,যার ধারাবাহিকতায় ১৯/০৪/২০০১ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে নজরুল গীতি শিল্পী হিসেবে তালিকা ভুক্তি হয়, এবং ০১/০৯/২০০১ সালে রেডিও বাংলাদেশ চট্টগ্রাম এ বংশীবাদক হিসেবে তালিকা ভুক্তি হয়। নিয়মিত নজরুল গীতি পরিবেশনার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেন। উঁনার নজরুল গীতি শুনে বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার, গীতিকার ও শিল্পী সত্য সাহা ২৮/১০/১৯৯৫ তারিখে চট্টগ্রাম ” আঁলিয়াস্ ফ্রয়েসে ” এক গুনী শিল্পী সম্বোধন করে উনার ডায়েরিতে লিখে দেন- ” ” “ননীদা অনেক বড় শিল্পী। তাঁর যোগ্য মর্যাদা হোক “
— সত্য সাহা ( স্বাক্ষর করেন) এই লেখাটা ননী গোপাল আচার্যের কাছে স্বপ্নময় মুহুর্ত ছিলো বলে তিনি বলেন। তিনি নিজ গ্রামে ” অংকুর সঙ্গীত বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নের অধ্যক্ষ হিসেবে দীর্ঘ ৮/ ৯ বছর শিক্ষকতা করেন । এরপর বোয়ালখালী উপজেলা ‘একুশে পদক ‘ প্রাপ্ত ঢোল বাদক বিনয় বাঁশী জলদাস স্মৃতি সঙ্গীত বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। গত ৭ জুলাই ২০২৩ তারিখ অংকুর খেলাঘর আসর আয়োজিত রবীন্দ্র – নজরুল সংগীত অনুষ্ঠানে ওস্তাদ ননী গোপাল আচার্যকে প্রধান অতিথি নবনির্বাচিত এমপি হাত দিয়ে সম্মাননা স্বারক প্রদান করেন। ২৩ জুলাই, ২০২৩ তারিখ ৭৭ বছর বয়সে তিনি নিজ বাড়িতে পরলোকে গমন করেন।
তিনি সশরীরে আমাদের সামনে আর উপস্থিত হবেন না কিন্তু অনন্তলোকে থেকেও এলাকার সাংস্কৃতিক যাত্রায় প্রেরনার উৎস হয়ে থাকবেন।

” সুরের আলো ভুবন ফেলে ছেয়ে,
সুরের হাওয়া চলে গগন বেয়ে,
পাষাণ টুটে ব্যাকুল বেগে ধেয়ে,
বহিয়া যায় সুরের সুরধ্বনি,
তুমি কেমন করে গান করো হে গুনী?”