শনিবার,২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

হাতি দিয়ে চাঁদা আদায়, অতিষ্ঠ পথচারী ও ব্যবসায়ী

হাতি দিয়ে চাঁদা আদায়, অতিষ্ঠ পথচারী ও ব্যবসায়ী

কালাই(জয়পুরহাট)প্রতিনিধি:-জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় হাতি দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হচ্ছে। হাতির মাহুত সেলামির নামে গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ও সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন আটকিয়ে চাঁদা তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ী ও পথচারীরা।
তবে চাঁদা ওঠানোর খবর পেয়ে কালাই বনবিভাগের লোকজন ওই এলাকায় গিয়ে হাতির মাহুতকে হাতেনাতে ধরে চাঁদা আদায় বন্ধসহ তাকে হাতি নিয়ে নিজ এলাকায় ফেরত পাঠিয়েছেন। পরে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থান থেকপ চলে আসলে তারা আবার ওই সড়কেই চাঁদা আদায় শুরু করেন।ফেরত না গিয়ে বরং হাতি নিয়ে মাহুত সামনের বাজারের দিকে এগিয়ে যান।

হাতির মাহুত শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘চাঁদা তো না, সাহায্য নিচ্ছি। বর্তমান সময়ে যাত্রা-সার্কাস বন্ধ থাকায় হাতি নিয়প বিপাকে পড়েছি। হাতিকে খাওয়ানোর জন্য সাহায্য চাইতে নিজ বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজলার মহাস্থানগড় থেকে হাতি নিয়ে কালাই পর্যন্ত এসেছি।’ সারাদিন যা পাই তা দিয়ে হাতির খরচ রেখে অতিরিক্ত টাকা মালিক নিয়ে যায়।পর্যপ্ত টাকা না তুললে মালিক বকাঝকা করে।

জানা গেছে, কালাইয়ে ১২টি হাটবাজার রয়েছে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, কয়েকদিন যাবত সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিভিন্ন হাটবাজারে হাতির মাহুত সেলামির নামে চাঁদা তুলছেন। চাঁদা দিলে হাতি শুঁড় দিয়ে নিয়ে মাহুতকে দেয়। আর চাঁদা না পেলে উচচস্বরে হুংকার দিয়ে গায়ে পানি ছিটিয়ে দেয়। ভয়ে ব্যবসায়ী ও পথচারী বাধ্য হয়ে চাঁদা দিচ্ছেন।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার নুনুজ হাট এলাকায় মোসলেমগঞ্জ-কিচক আঞ্চলিক সড়কে বিভিন্ন যানবাহন আটকিয়ে এবং আজ শুক্রবার সকালে মোসলেমগঞ্জ হাট এলাকায় একটি হাতিকে চাঁদা তুলতে দেখা গেছে।

নুনুজ বাজারের ব্যবসায়ী মিলন রহমান বলেন,‘হাতির জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ। চাঁদা না দিলে নানাভাব আমাদের বিরক্ত করে,ভয়ভীতি দেখায়। তাই ভয়ে চাঁদা দিয়েছি। এটা নতুন কিছু নয়, অনবরত তারা এ কাজ করেই যাচ্ছেন। এটা একটা কৌশলী চাঁদাবাজি। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে চাঁদা তুলছে আর কেউ এর প্রতিবাদ করছে না।’

ওই বাজারপর মুদিদাকানি ওয়াদুদ মন্ডল বলেন, ‘সকালে কেবল দোকান খুলে বসেছি। ঠিক তখনই হাতি এসে দাকানের সামনে হাজির। টাকা নেই বলার পরও হাতি যাচ্ছে না। শুঁড় দিয়ে আমার গায়ে পানি দিয়েছে। দাকানের মালামাল উল্টাপাল্টা করেছে। তাই বাধ্য হয়ে প্রথমে ১০ টাকা চাঁদা দিয়েছি। না মানায় পরে ২০ টাকা দিয়েছি।’

গত বৃহস্পতিবার সকালে মোসলেমগঞ্জ-কিচক সড়ক দিয়ে কালাই থেকে মোসলেমগঞ্জ বাজার এক আত্মীয়ের বাসায় স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছিলেন বালাইট গ্রামের নূরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে সড়কের নুনুজ এলাকায় একটি হাতি পথ রোধ করে। ভয়ে আমার সন্তান চিৎকার করতে থাকপ। তড়িঘড়ি করে ২০ টাকা দিল হাতি নেয় না। পরে ৫০ টাকা দিলে রাস্তা ছেড়প দেয়।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কালাই বনবিভাগে কর্মরত বাগান মালি জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন,‘সড়ক যানবাহন আটকিয়ে ও বাজারের দোকানীদের নিকট থেকে হাতি নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা ওঠানোর খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে আসি। টাকা ওঠানার সত্যতাও পেয়েছি। টাকা ওঠানো বন্ধ করে মাহুতকে হাতি নিয়ে তার নিজের এলাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন,‘হাতি দিয়ে চাঁদা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। এ রকম ঘটনা আমাকে আগে কেউ জানাননি। তবে এখন থেকে খোঁজ রাখা হবে এবং আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email