
স্বাধীনতা– হে স্বাধীননতা
অধ্যাপক অপর্ণা বিশ্বাস
আমাদের জাতীয় জীবনে এমন কতকগুলো দিন আছে,যা আমাদের স্বপ্ন দিয়ে তৈরী, স্মৃতি দিয়ে ঘেরা।
এ দিনগুলোর স্মৃতি ইশারায় পেছন থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকে।স্বাধীনতা দিবস অন্যতম। ২৬ শে মার্চ, আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা দিবস।লাল মোরগ যেমন করে সারাজীবন ভোরকে ডাকে, তেমনি করে আমরা তোমাকে ডেকেছি,হে স্বাধীনতা।
আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টিধারা যেমন করে নেমে এসে স্নিগ্ধতার প্রলেপ বুলিয়ে দেয় মাটিতে,তেমনি করে তুমি এলে।
তোমাকে পেয়েই স্বাধীনতা, বর্ষাস্নাত স্নিগ্ধ প্রলেপে মৃত মৃত্তিকাকে সঞ্জীবিত করি।বারিসিক্ত ভূমিতে বপন করি পরিচ্ছন্ন বীজ।তোমাকে পেয়েই স্বাধীনতা, মর্ত্যের সীমা ছেড়ে পাখা মেলি মহাকাশের দিকে। ভূগর্ভের অন্ধকার থেকে ছিনিয়ে আনে সমৃদ্ধির নিশান। তোমারি জন্যে হে স্বাধীনতা তুমিই জীবনকে দাও অমৃতময় মৃত্যুকে দাও মহিমা।
হে স্বাধীনতা, সহজ ছিলে না সেসময়। দু:সময় বুকের পাঁজরকে বুলেট ঝাঝরা করতে চেয়েছে।হতাশা উচুঁ শিরটাকে নোয়াতে চেয়েছে মাটিতে। পরাজয় পেছনে ভয় দেখিয়ে বিবর্ণ করতে চেয়েছে সত্বাকে তোমার জন্যে হে স্বাধীনতা আমাদের পূর্বসুরীরা তাঁদের ত্যাগে, এবাদতে, চোখের জলে, বুকের রক্তে উর্বর করেছেন এদেশের মাটি, কত মা হারিয়েছেন আলোর ষষ্ঠী।
কত মা, ভগিনী স্বৈরাচারী অত্যাচারী উশৃঙ্খল, হায়েনা, পশ্চিম পাকিস্তানি রিপুর তাড়নে বিবেক লয় পাওয়া সৈনিকদের কাছে সম্ভ্রম হারিয়েছেন।কেউ করেছেন আত্মহত্যা বাকীরা বেঁচে আছেন তীব্র নরক যন্ত্রণায় ছটফট করে– এভেবে এ আমি কি সেই আমি! দেশপ্রেমিকরা স্বদেশকে মুক্ত এবং ভবিষ্যৎ বংশধরদের সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তির জন্যে নিজেদের জীবন অকুতোভয়ে উৎসর্গ করেছেন।শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত তাঁরা আমাদের হৃদয়কাশে,উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জ্বলজ্বল করবে।সত্যি,আনন্দ, বেদনা, সুখ, দুঃখ, শৌর্য, সৌন্দর্য, আলিঙ্গনে বড় বিচিত্র রুপিনী তুমি হে স্বাধীনতা।
এক একটা বছর যায়,এক একটা বছর আসে। স্বাধীনতা তোমার চির বসন্ত যৌবন, আমাদের গর্বিত করে, উদ্বুদ্ধ করে, অনুপ্রাণিত করে মহত্ত্বের নব নব,দিক,স্পর্শ করতে, কৃতজ্ঞ, বড় কৃতজ্ঞ তোমার কাছে হে স্বাধীনতা। একটি ভূখণ্ডের নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে প্রস্ফুটিত হয়ে তোমার সৌরভ ছড়িয়ে দাও,দিগদিগন্তে।
বলতে,পারি,হে দেশমাতৃকা তুমি আমাদের জীবন আমাদের অস্তিত্ব। স্বাধীনতার এদিনে আমরা গভীর বিশ্বাসে প্রত্যাশা করি অর্থনৈতিক মুক্তি, নারীর সমঅধিকার, প্রাপ্যসম্মান,বঞ্চনা, বৈষম্যর,অবসান। সর্বোপরি দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা, উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি।
