সোমবার,১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

“ধর্ম যার যার, নিরাপত্তার অধিকার সবার” –তারেক রহমান

হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্ভয়ে দুর্গাপূজার উৎসব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানেই নিজেকে দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই। এই বাংলাদেশ আপনার-আমার, আমাদের সবার। বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবে—এটাই বিএনপির নীতি, এটাই বিএনপির রাজনীতি। আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে, দল–মত–ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার।’

আজ শুক্রবার বিকেলে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে তারেক রহমান এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন। তারেক রহমান সবাইকে দুর্গাপূজার আগাম শুভেচ্ছা জানান।

বাংলাদেশে কখনোই, কোনোকালেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা হামলার পরিস্থিতি ছিল না—এমন মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতেও এটি ঘটার কোনো কারণ আমি দেখি না। এমন বাস্তবতায় আপনাদের অনেকে হয়তো একমত হবেন যে হাতে গোনা দু-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশে সংখ্যালঘুকেন্দ্রিক অধিকাংশ হামলার ঘটনা কিন্তু ধর্মীয় কারণে হয়নি। বরং আমরা যদি খুব খেয়াল করে দেখি, এসব হামলার ঘটনার অধিকাংশ অবৈধ লোভ ও লাভের জন্য দুর্বলের ওপর সবলের হামলা। আর এর নেপথ্যে রয়েছে অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বিশ্বাসী বলুন আর অবিশ্বাসী বলুন কিংবা সংস্কারবাদী—প্রত্যেক নাগরিক রাষ্ট্র বা সমাজে যার যার ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক অধিকারগুলো স্বচ্ছন্দে বিনা বাধায় উপভোগ করবে—এমন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণের জন্যই মুক্তিযোদ্ধারা লাখো প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিষ্টান—মুক্তিযুদ্ধের সময় এমন কোনো জিজ্ঞাসা কিন্তু ছিল না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু, এসব নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বাঙালি-অবাঙালি, বিশ্বাসী–অবিশ্বাসী কিংবা সংস্কারবাদী প্রত্যেক নাগরিকের একমাত্র পরিচয়—আমরা বাংলাদেশি।’

শেখ হাসিনার সরকারের শাসনের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, গত ১৫ বছর দেশে আইনের শাসন ছিল না বলেই প্রধান বিচারপতি হয়েও এস কে সিনহাকে অবিচারের শিকার হতে হয়েছিল। পলাতক স্বৈরাচারের আমলে আদালত আর আয়নাঘর একাকার হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু, দল–মত, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্র ও সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে জড়িয়ে চক্রান্ত শুরুর অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে একটা চক্রান্ত শুরু হয়েছে। একটা ভয়াবহ দানবকে একটা অবিশ্বাস্য বিপ্লবের মধ্য দিয়ে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এবং দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করে বিজয় অর্জন করেছি। তারপর এই বিপ্লবকে ব্যর্থ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে একটা ষড়যন্ত্র হয়েছে, চক্রান্ত হয়েছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই এবং দুঃখজনকভাবে আপনাদের জড়িত করে এটা করার চেষ্টা হয়েছে।’

৫ আগস্টের পরবর্তী ঘটনাগুলো উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইন্ডিয়ার জার্নালিস্টরা এসেছিলেন, সবাইকে একটা কথা বলার চেষ্টা করেছি আমরা, এই পরিবর্তনের (সরকারের পতন) ফলে যেটা ঘটেছে, সেটা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক—সেটা সাম্প্রদায়িক নয়।’

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের ঘটনার ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, ‘আজকে আবার একই চক্রান্ত শুরু হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। জিনিসগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দেখবেন না। আজকে চট্টগ্রামে একইভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এগুলো আমাদের অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে আমরা স্বাধীন হয়েছি। সেদিন হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান পাশাপাশি দাঁড়িয়েছে। আবারও পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করব। যারা চক্রান্ত করছে, তাদের পরাজিত করতে হবে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুকোমল বড়ুয়া, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মিল্টন বৈদ্য, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসু দেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা প্রমুখ।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email