রবিবার,২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে, পিটিআইকে–ড. ইউনূস

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে বসে যে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন, তা একটি ‘অবন্ধুসুলভ আচরণ’। তিনি বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ঢাকা ভারতের কাছে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁকে অবশ্যই চুপ থাকতে হবে। এ ছাড়া তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে সবার সামনে বিচার করা হবে।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘যদি বাংলাদেশ (সরকার) তাঁকে (শেখ হাসিনা) ফেরত না নেওয়া পর্যন্ত ভারত তাঁকে রাখতে চায়, তবে শর্ত হলো—তাঁকে চুপ থাকতে হবে।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ভারতে তাঁর (শেখ হাসিনার) অবস্থানের কারণেই কেউই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কারণ, আমরা তাঁকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে চাই। তিনি ভারতে আছেন এবং মাঝেমধ্যেই কথা বলছেন, যা সমস্যাজনক। তিনি যদি চুপ থাকতেন, সেখানে নিজের দুনিয়ায় ডুবে থাকতেন, তবে আমরা হয়তো ভুলে যেতাম, মানুষও হয়তো এটা ভুলে যেত। কিন্তু ভারতে বসে তিনি কথা বলছেন—এটা কেউ পছন্দ করছে না।’
গত ১৩ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে বসে বক্তব্য দেন এবং দেশে যে সহিংসতা, হত্যা ও ভাঙচুর হয়েছে, তার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার দাবি করেন। বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটি না আমাদের জন্য ভালো, আর না ভারতের জন্য ভালো। বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি আছে।’
শেখ হাসিনার কথা বলার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ভারতকে তার অবস্থান জানিয়েছে কি না, জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মৌখিকভাবে এবং বেশ দৃঢ়ভাবে (ভারতকে) জানানো হয়েছে যে তাঁর চুপ থাকা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘সবাই এটা বোঝে। আমরা বেশ দৃঢ়ভাবে বলেছি যে তাঁর চুপ থাকা উচিত। এটি আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বহীন আচরণ। তাঁকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি যে স্বাভাবিক নিয়মে সেখানে গেছেন, তা নয়। জনগণের অভ্যুত্থান ও জনরোষের মুখে তিনি পালিয়ে গেছেন।’
ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নৃশংসতার বিপরীতে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন ন্যায়বিচারের জন্যই। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, তাঁকে ফিরিয়ে আনতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে না। তিনি যে ধরনের নৃশংসতা চালিয়েছেন, তাঁকে এখানে সবার সামনে বিচার করতে হবে।’
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে জোর দিয়ে বলেন, কেবল শেখ হাসিনার নেতৃত্বই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে—নয়াদিল্লিকে এই ন্যারেটিভ বাদ দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আগামীর পথ হলো ভারতের এই ন্যারেটিভ থেকে বেরিয়ে আসা। ন্যারেটিভটি হলো—সবাই ইসলামপন্থী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইসলামপন্থী এবং বাকি সবাই ইসলামপন্থী এবং এই দেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে। আর শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশ নিরাপদ। ভারত এই আখ্যানে বিমোহিত। ভারতকে এই আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও আরেকটি প্রতিবেশী—এটিও ভারতকে মনে রাখতে হবে।’
বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সাম্প্রতিক ঘটনা এবং ভারতের এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের বিষয়টিকে এত বড় আকারে চিত্রিত করার চেষ্টার বিষয়টি একটি অজুহাত মাত্র।’
সাক্ষাৎকারে ৮৪ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী এই নেতা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের উন্নতির জন্য একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। ড. ইউনূস বলেন, ‘উভয় দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং এটি বর্তমানে একটি বন্ধুর পথে আছে।’
ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ট্রানজিট এবং আদানির বিদ্যুৎ চুক্তির মতো কিছু চুক্তি পুনর্বিবেচনার দাবি আছে। তিনি বলেন, ‘সবাই বলছে এটা করা দরকার। আমরা দেখব কাগজে কী আছে এবং দ্বিতীয়ত, প্রকৃত অবস্থা আসলে কী। আমি এটি নির্দিষ্টভাবে এখনই বলতে পারি না। যদি পর্যালোচনা করার প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করব।
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email