সোমবার,২৬শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ব্রিটিশ ও ফরাসি তরুণ ধনী ৪৪% দেশ ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা 

ব্রিটিশ ও ফরাসি তরুণ ধনী ৪৪% দেশ ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা


যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচনে জয় পেয়েছে বামপন্থী দল। এরপর দেশ দুটি ছাড়তে ইচ্ছুক এমন তরুণ মিলিয়নেয়ার বা ধনীর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে বলে সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে। এদের মধ্যে বড় অংশ বসবাস বা বিনিয়োগের জন্য উত্তর আমেরিকা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রতি আগ্রহী বলে জানিয়েছেন খবর অ্যারাবিয়ান বিজনেস। 

মন্ট্রিয়লভিত্তিক আর্থিক পরামর্শক সংস্থা আর্টন ক্যাপিটাল পরিচালিত ‘দ্য অ্যাফ্লুয়েন্স অ্যান্ড ইলেকশন সার্ভে’ অনুসারে, ১৮-৩৪ বছর বয়সী ব্রিটিশ ও ফরাসি তরুণ কোটিপতিদের মধ্যে ৪৪ শতাংশেরই দেশ ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মূলত নিজ দেশের সংরক্ষণবাদিতা এড়িয়ে উন্নত অর্থনৈতিক সুযোগ কাজে লাগাতে ফরাসি ও ব্রিটিশ ধনী তরুণরা দেশ ছাড়তে চাইছেন। এর মধ্যে উত্তর আমেরিকার প্রধান দুই অর্থনীতি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রকে গন্তব্য হিসেবে বাছাই করেছে যথাক্রমে ৩২ ও ৩১ শতাংশ তরুণ। এছাড়া এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি বা ২১ শতাংশ তরুণ কোটিপতি ইউএইতে অভিবাসনে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন।

কমপক্ষে ১০ লাখ ইউরো নিট সম্পদধারী ২৫৬ জন ফরাসি ও কমপক্ষে ১০ লাখ পাউন্ডের নিট সম্পদ আছে এমন ২৬২ ব্রিটিশের মতামত নেয়া হয়েছে আর্টন ক্যাপিটালের এ জরিপে। সংস্থাটি জানায়, উত্তরদাতাদের মধ্যে ২৬ শতাংশের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫০ লাখ ইউরো বা ৫০ লাখ পাউন্ডের বেশি।

এর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-সহ একাধিক সংস্থা পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, চলতি বছর একাধিক দেশে নির্বাচন থাকায় তা বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের এ জরিপে নির্বাচন-পরবর্তী চিত্র উঠে এসেছে। উভয় দেশেই বামপন্থী সরকার নির্বাচিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ধনী ব্রিটিশ ও ফরাসি নাগরিকরা সম্ভাব্য কর বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জরিপে উঠে এসেছে।

আরো বলা হচ্ছে, দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সাংস্কৃতিক সম্পর্কের কথা বিবেচনা করে কানাডাকে পছন্দ করছেন ফরাসি ধনীরা। এছাড়া অর্থনীতির আকার ও বিকাশমান প্রযুক্তি খাতের কারণে অভিবাসন ও বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী আকর্ষণ ধরে রেখেছে।

এ বিষয়ে আর্টন ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা আরমান্ড আর্টন বলেন, ‘আমাদের জরিপ বলছে ইউরোপ থেকে সম্পদ চলে যাওয়ার শক্তিশালী সম্ভাবনা বিরাজ করছে। ইউরোপ বর্তমানে ক্রসরোডের মাঝে রয়েছে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো দেশকে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের কাছে নিজেদের আকর্ষণ ধরে রাখতে আরো বেশি কিছু করতে হবে। তারা যদি কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তবে ধনী নাগরিকরা আমেরিকান ড্রিম বা কানাডার উচ্চ জীবনযাত্রার টানে দেশ ত্যাগ করে চলে যাবে।’

আরমান্ড আর্টন আরো যোগ করেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন বৈশ্বিক উদ্যোক্তাদের কেন্দ্র হিসেবে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর, টোকিও ও লন্ডনের মতো অর্থনৈতিক হেভিওয়েটদের সমান হয়ে উঠেছে দুবাই। সুবিধাজনক কর ব্যবস্থা, অনুকূল নীতি ও সংস্কৃতি এখানে বিনিয়োগকারীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ করে দেয়। ইউএই এখন ধনীদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়, তা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’

জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, সম্পদের ওপর কর বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন ব্রিটিশ ও ফরাসি তরুণ ধনীরা। জরিপে অংশ নেয়া ৫১৮ জনের মধ্যে ৯০ শতাংশই জানিয়েছেন, নতুন সরকারের অধীনে কর বৃদ্ধি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। তবে বেশির ভাগই ব্যক্তিগত কর বৃদ্ধি নিয়েও চিন্তিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ সম্ভাব্য আইন পরিবর্তন সম্পর্কে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেন। তারা মনে করেন, নতুন আইন তাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া বিদেশে আরো ভালো অর্থনৈতিক ও জীবনযাপনের সুযোগ রয়েছে বলে জানান ৭৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। অবশ্য জরিপে ৭ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা নিজ দেশে অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত নন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বড় অংকের বিনিয়োগের বিপরীতে বিদেশীদের জন্য গোল্ডেন ভিসা সুবিধা দিয়ে আসছে। জরিপে অংশ নেয়া কোটিপতিদের মধ্যে দেশত্যাগের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হিসেবে উঠে এসেছে গোল্ডেন ভিসা ও বিনিয়োগ প্রকল্পের মাধ্যমে নাগরিকত্ব অর্জন। ৩৪ শতাংশ বা এক-তৃতীয়াংশের বেশি অংশগ্রহণকারী জানান, তাদের এ ধরনের সুবিধা নেয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।

অভিবাসনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হচ্ছে—এমন প্রশ্নে ৪৮ শতাংশ বলেছেন অর্থনৈতিক সুযোগ। তবে ৬৬ শতাংশ বলেছেন যে, তারা উন্নতমানের জীবনের জন্য দেশ ছাড়তে চান। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতাকে নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন ৩৩ শতাংশ বা এক-তৃতীয়াংশ ফরাসি ও ব্রিটিশ কোটিপতি। নিরাপত্তাকে অভিবাসনের কারণ হিসেবে দেখেন তারা।

 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email