শনিবার,৩১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

‘ভারতের পানি ও দেশের ভারী বর্ষনে বাংলাদেশের বিশাল এলাকায় ভয়াবহ বন্যা পরিণত

‘ভারতের পানি ও দেশের ভারী বর্ষনে বাংলাদেশের বিশাল এলাকায় ভয়াবহ বন্যা পরিণত

দেশে টানা ভারি বর্ষণ এবং ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানিতে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় এসব এলাকায় বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এসব এলাকার বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট,বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ সব কিছু বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধকোটি মানুষ।

শুধু মানুষ নয় মাছের ঘের, জমির ফসল, তরিতরকারি, ফলের বাগানসহ অসংখ্য গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি বানের পানিতে ভেসে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চাল ছুঁয়েছে বন্যার পানি।

আজ বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকায় ছুটে যান এবং বানভাসী মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা শুনে আসছি, প্রতিবেশী দেশ ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। কথিত বন্ধু ভারত ফারাক্কাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের বিশাল এলাকা মরুভূমিতে পরিণত করেছে।

গ্রীষ্মে যখন আমাদের পানির প্রয়োজন হয়, তখন তারা আমাদের পানি না দিয়ে শুকিয়ে মারে। পানির অভাবে হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়। আবার বর্ষার মৌসুমে যখন পানির প্রয়োজন নেই, তখন পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদের বন্যায় ভাসায়। ভারত সরকারের এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডে আমরা হতবাক।স্বভাবতই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, ভারত আমাদের কেমন বন্ধু!’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের একটা সরকার ছিল, সাড়ে ১৫ বছর। তারা বলত, আমাদের দেশকে সিঙ্গাপুর বানায় ছাড়ছে। এ হলো সিঙ্গাপুরের দৃশ্য। তারা বলত, এটা কানাডা, এ হলো কানাডার দৃশ্য। এগুলো সব ছিল মিথ্যা এবং ভোগাস। তারা সাধারণ জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। মানুষ তার নিজের বাসায় একটা পর্দা টানালে বলত- এ ঘরে জঙ্গি আছে। কিন্তু আসল জঙ্গি তারাই। তারা মাথায় হেলমেট নিয়ে হাতে মুগুর নিয়ে মানুষের ওপর আক্রমণ চালায়। এরাইতো আসল জঙ্গি।’

আমাদের ছাত্র, তরুণ ও যুবসমাজ পুলিশের সামনে বুক চেতিয়ে, বুকের মধ্যে গুলি নিয়ে সন্ত্রাসীদের তাড়িয়েছে বাংলার বুক থেকে উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘একটা শাসক সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করল, তাকে পালাতে হবে কেন? তারা বলত- আমাদেরকে নাকি উন্নয়নের মহাসড়কে উঠিয়েছে। আমরা মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি এই জন্য যে তিনি আমাদের থেকে জালিম বিদায় করেছেন। মহান রবের নিকট দোয়া করি চিরদিনের জন্য যেন এ জালিমের বিদায় হয়। আর কোনো জালিমের যেন আগমন না ঘটে। দেশ যেন সুবিচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকটা মা-বোন, ভাইয়েরা যাতে সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে পারে এবং ইজ্জত, দ্বীন, ঈমান, ধর্ম নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এমন একটা পরিবেশ চাই, যেখানে দেশের প্রত্যেক ধর্মের মানুষ স্ব-স্ব ধর্মীয় অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবে। কেউ কাউকে বাধা দেবে না। আফসোস, বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ মুসলমান। অথচ মুসলমানদেরকেই বিগত ১৬ বছর যাবৎ সংখ্যালঘু বানিয়ে রাখা হয়েছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে অন্য সব ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় অনুশাসন নির্বিঘ্নে পালন করতে পেরেছে, তাতে বাধা ছিল না। কিন্তু একজন খতিব মিম্বারে দাঁড়িয়ে তার ইচ্ছামতো বক্তব্য দিতে পারতেন না। ওয়াজ-মাহফিলে মাইক কেড়ে নেওয়া হতো। তাফসির মাহফিলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হতো। ১৪৪ ধারা জারি করা হতো। পুলিশ পাঠিয়ে নাজেহাল করে ওয়াজ-মাহফিল বন্ধ করে দেওয়া হতো। বাংলার মানুষ ভবিষ্যতে আর তা হতে দেবে না। ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাতে হাত রেখে বাংলাদেশকে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। এ জন্য আপনাদের, দোয়া, সাহায্য এবং ভালোবাসা চাই।’

উল্লেখিত তিন জেলা সফরকালে আমিরে জামায়াত অসহায় বানভাসী ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সার্বিক খোঁজখবর নেন। তিনি বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে আশ্রয়গ্রহণকারী মানুষের মাঝে ফুড প্যাকেট ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। এ সময় আমিরে জামায়াত সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান এবং বক্তব্য শেষে সব প্রকার দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করেন।

ফেনী জেলায় ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, জেলা আমির এ কে এম শামসুদ্দিন, জেলা সেক্রেটারি মুফতি আব্দুল হান্নানসহ জেলা-উপজেলার সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

লক্ষ্মীপুরে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা দ্বীন মোহাম্মদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, জেলা জামায়াতের আমির রুহুল আমিন ভূইয়া, নায়েবে আমির এ আর হাফিজ উল্যাহ, জেলা সেক্রেটারি ফারুক হোসেন নুরনবী, সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন মাহমুদ ও মহসিন কবির মুরাদ, জেলা প্রচার সম্পাদক সরদার সৈয়দ আহমদ, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক আবদুর রহমান, শহর আমির আবু ফারাহ নিশান, শিবিরের জেলা সভাপতি আরমান পাটওয়ারী, সেক্রেটারি ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।

নোয়াখালী জেলা আমির ইসহাক খন্দকারের সভাপতিত্বে সেনবাগ রাস্তার মাথা ও বেগমগঞ্জের চৌমুহনীসহ জেলার সব কটি উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে প্রায় ৫ হাজার দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগরী আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। জেলা সেক্রেটারি সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা বোরহান উদ্দিনের পরিচালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও জেলা নায়েব আমির মাওলানা সাইয়েদ আহাম্মদ, মাওলানা নিজাম উদ্দিন ফারুক, জেলা সহকারী সেক্রেটারি ইসমাইল হোসেন মানিক, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, জেলা প্রচার সেক্রেটারি ডা. বোরহান উদ্দিন, নোয়াখালী শহর আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইউছুফ, ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য নোয়াখালী শহর সভাপতি আবু সাঈদ সুমন। আরো উপস্থিত ছিলেন সেনবাগ উপজেলা আমীর মাওলানা ইয়াছিনুল করিম, নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল মালেক, সেক্রেটারি মাওলানা নূরুল আবছার, চৌমুহনী পৌরসভা আমির জনাব জসিম উদ্দিন, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, বেগমগঞ্জ উপজেলা আমির মাওলানা মোহাম্মদ আবু যায়েদ, সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুর রহিম প্রমুখ।

নোয়াখালী জেলায় বন্যার্তদের মাঝে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে প্রায় ৫ হাজার দুর্গতদের মাঝে চাল, ডাল, তেল, আলু, লবণ, চিনি, পেঁয়াজ, খাবার স্যালাইন, দিয়াশলাইসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ করা হয়।

সংগৃহিত 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email