শনিবার,১৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মায়ের কোলে রাসেল ——বিশ্বজিত বড়ুয়া

মায়ের কোলে রাসেল
বিশ্বজিত বড়ুয়া

টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। যদিও সকালের আকাশটা ফর্সা। স্কুলে যাওয়ার সময় হয়ে এলো। রাসেল স্কুলে যাবে। সময় মত স্কুলে ঢুকতে না পারলে আবার স্যারেরা বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবেন। মা তখন রাসেলের স্কুলের নাস্তা তৈরী করছেন। রাসেল নিজের উপর খুবই বিরক্ত, সে টাই বাঁধা ভুলে গেছে। হাসু আপুকে বললেন, হাসু আপু আমার টাই-টা বেঁধে দাও না, টাই কি করে বাঁধতে হয়, আমি বার বার ভুলে যাই! হাসু আপু মুচকি হেসে বললেন; বার বার শিখিয়ে দেওয়ার পরও তুই টাই বাঁধতে ভুলে যাস। আয়, আমার কাছে আয়, আজ তোকে আবার টাই বাঁধা শিখিয়ে দেবো। এবার থেকে কিন্তু আর টাই বাঁধা ভুলবি না। আর শোন, আজ আমার ইউনিভার্সিটিতে একটা কাজ আছে, যাওয়ার সময় তোকে আমি স্কুলে নামিয়ে দেবো। রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র।
মা নাস্তা বানিয়ে ডাইনিং টেবিলে রেখে হাসু আপু আর আমাকে ডাকছে, নাস্তা করার জন্য। হাসু আপু আর আমি নাস্তা শেষ করলাম। তারপর মা তার আঁচল দিয়ে রাসেল সোনার মুখ মুছিয়ে দিলেন। মা রাসেলকে বললেন; বাবা স্কুলে দুষ্টুমি একদম করবে না। তুমি তো এমনিতেই অনেক ভালো ছেলে। রাসেল বলল; স্কুল বলে যাচ্ছি; তা না হলে, তোমার আঁচল ছাড়া আমার কিছুই ভালো লাগে না মা। সব সময় তোমার কোলে বসে থাকতে ইচ্ছে করে। তোমার কোলে যাদু আছে মা, তোমার কোল, আমার কাছে এতো ভালো লাগে কেনো মা? তুমি কী বলতে পারো? হাসু আপু বলে উঠলো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি আয় রাসেল। আসছি আপু। হাসু আপু রাসেলের হাত ধরে বাসা থেকে বের হওয়ার আগ মুহুর্ত্বে মা বললেন, হাসু রাসেলকে স্কুলের গেইটে ঢুকিয়ে দিয়ে তারপর তুই যাবি। আচ্ছা মা তাই করবো। আর শোন স্কুল ছুটির পর আমি গিয়ে রাসেলকে নিয়ে আসব। ইউনিভার্সিটিতে তোর কাজ শেষ হতে কতক্ষণ লাগে। হাসু এবং রাসেল মাকে হাত নেড়ে বিদায় জানালো। স্কুলে যেতে যেতে ভাই বোনের মধ্যে অনেক কথা হলো। রাসেল হাসু আপুকে পেয়ে এতো খুশি হলো যা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। রাসেল হাসু আপুকে নানান প্রশ্ন করতে লাগলো। হাসু আপুও বিরক্ত না হয়ে একের পর এক রাসেলের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চলছে। ভাই বোনে গল্প করতে করতে কখন যে স্কুলের গেইটে চলে এসেছে, তারা নিজেরাও জানে না। হাসু আপু বললেন, যা ভাই ক্লাশে গিয়ে যেখানে খালি সিট আছে সেখানে গিয়ে বসবি। আচ্ছা আপু। আমি এখন যাই। ও স্কুল ছুটির পর একা একা বাসায় যাওয়ার চেষ্টা করিও না, মা তোমাকে নিতে আসবেন। আচ্ছা আপু বলে, আপুকে বিদায় দিলো রাসেল। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট রাসেল।
সেই বছর হাসু আপুর বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ে পর দুলা ভাইয়ের সাথে বিদেশে চলে গেলেন। মাঝে মাঝে হাসু আপুর সাথে কথা হয়। রাসেল টেলিফোনে উচ্চস্বরে বলতে লাগল; আপু তুমি আমাকে অনেক সুন্দর করে টাই বাঁধা শিখিয়ে দিয়েছো। আমি টাই বাঁধা আর ভুলি নাই। টেলিফোন রেখে রাসেল মনের আনন্দে খেলতে গেলো।
খেলতে খেলতে কখন যেন সন্ধ্যা নেমে এলো, রাত হতে না হতে ঘোর অন্ধকার। সেদিন ছিল ১৫ই আগষ্ট, এতো অন্ধকার এর আগে রাসেল কখনও দেখে নাই। রাসেল রাতের খাবার খেয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়ল। গভীর রাতে রাসেল স্বপ্নে বিভোর; দেখে আকাশে বিজলী চমকাচ্ছে, মাঝে মাঝে সারা পৃথিবী আলোকময় হচ্ছে, মেঘের সেই কী গর্জন! মনে হচ্ছে বাসার ছাঁদ ভেঙ্গে পড়ছে মাথার উপর, ছাঁদ ফুটো হয়ে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ছে মেঝে, একি এ-তো বৃষ্টির পানি নয়, যেন লাল রক্তের স্রোত নদী, কেনো এমন হচ্ছে, আমার এতো ভয় লাগছে কেনো? মা কোথায়? মা-তো বিছানায় নেই, মা মা তুমি কোথায়? আমি মায়ের কাছে যাবো, আমি মায়ের কাছে যাবো! মানুষের মত দেখতে কিন্তু মানুষ নয়, এক কালো বিড়াল, কালো বিড়াল সামনে এসে বলল; তুমি মায়ের কাছে যাবে? এসো আমি তোমাকে তোমার মায়ের কাছে নিয়ে যাবো। কী আশ্চর্য! কালো বিড়াল আমাকে সত্যিই সত্যিই আমার মায়ের কোলে নিয়ে গেছে! সেই থেকে এখনও মায়ের কোলে রাসেল!
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email