
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ব্যবসায়ী “জানে আলম” হত্যা মামলার মৃত্যূদন্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামী মোঃ আয়ুব আলী’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭
নিউজ ডেস্কঃ– গত ৩০ মার্চ ২০০২ খ্রিঃ তারিখে আদালতে স্বাক্ষী দেওয়ার প্রাক্কালে আনুমানিক সকাল ০৯০০ ঘটিকার দিকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে স্থানীয় কিছু দুস্কৃতিকারী ও সৈয়দ বাহিনীর সদস্যরা ব্যবসায়ী জানে আলম (৪৮) কে তার ০১ বছরের শিশু বাচ্চার সামনে নির্মম ও নৃশংসভাবে প্রথমে লাঠি সোটা, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে এবং পরবর্তীতে মৃত্যূ নিশ্চিত করার জন্য গুলি করে হত্যা করে। যা সেই সময়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। উক্ত ঘটনায় ভিকটিম এর বড় ছেলে মোঃ তজবিরুল আলম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানায় ২১ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং- ২১, তারিখ ৩০ মার্চ ২০০২ ইং, ধারা- ৩০২/৩৪/৪৪৯ পেনাল কোড ১৮৬০।

এখানে উল্লেখ্য যে, এর মাত্র চার মাস পূর্বে অর্থাৎ গত ০৯ নভেম্বর ২০০১ ইং তারিখে নিহত ভিকটিম এর আপন ছোট ভাই অর্থাৎ বাদীর আপন ছোট চাচাকে ঐ বাহিনী একইভাবে নির্মম ও নৃশংসভাবে প্রথমে লাঠি সোটা, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে এবং পরবর্তীতে মৃত্যূ নিশ্চিত করার জন্য গুলি করে হত্যা করে। উক্ত ঘটনায়ও চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানায় ১৩ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল যার মামলা নং-০৭, তারিখ- ০৯ নভেম্বর ২০০১, ধারা- ১৪৩/৩২৩/ ৩২৪/ ৩১৩/ ৩২৬/ ৩০৭/৩০২/৩৪, পেনাল কোড- ১৮৬০। উল্লেখ্য যে, এই মামলাতেও আয়ুব আলী অন্যতম প্রধান আসামী ছিলেন।
পরবর্তীতে ব্যবসায়ী জানে আলম হত্যায় দায়েরকৃত মামলার ঘটনায় বিজ্ঞ আদালত গত ২৪ জুলাই ২০০৭ ইং তারিখে রায় ঘোষণা করেন। উক্ত রায়ে বিজ্ঞ আদালত ১২ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং ০৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। বিজ্ঞ আদালত রায় ঘোষণার পর আসামীগন মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে আপীল করলে মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট আসামী আয়ুব আলীসহ মোট ১০ জনকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ও ০২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং বাকীদের খালাস দেন।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, ব্যবসায়ী জানে আলমের হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামী এবং উক্ত মামলার ২১ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত আসামী আয়ুব আলী চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানাধীন ফতেহাবাদ এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৭ জুন ২০২৩ইং তারিখে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী আয়ুব আলী (৭০), পিতা- মৃত ইয়াকুব মিয়া, সাং- আমিরাবাদ, থানা- লোহাগাড়া, জেলা- চট্টগ্রামকে আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী জানে আলম হত্যা মামলায় ২১ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত আসামী বলে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকান্ডের মুল কারণ হিসেবে জানা যায় যে, ব্যবসায়ী জানে আলম (৪৮) গত ০৯ নভেম্বর ২০০১ ইং তারিখে তার আপন ছোট ভাইয়ের হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ছিলেন। মূলত জানে আলম পরিবারের বড় ছেলে এবং আর্থিকভাবেও কিছুটা স্বচ্ছলও ছিলেন। তাই মামলা-মোকদ্দমার ব্যয়ভার তিনি বহন করতেন। এতে প্রতিপক্ষের আক্রোশ তার উপর দিন দিন বেড়ে যায়। প্রতিপক্ষের ধারনা ছিল যে, ব্যবসায়ী জানে আলকে হত্যা করলে ঐ পরিবারের মামলা-মোকদ্দমা চালাবার মত কোন লোক থাকবে না এবং প্রত্যক্ষভাবে আর কোন সাক্ষীও থাকবে না। আর্থিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়বে এবং তার সকল সম্পত্তি সহজে তারা গ্রাস করতে পারবে। এই কারনে ঘাতক চক্র প্রকাশ্যে দিবালোকে ব্যবসায়ী জানে আলমকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।