
ফেনীর ফুলগাজীতে সিএনজি চালককে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী সুমন চন্দ্র রায় গ্রেফতার
নিহত ভিকটিম মোঃ মুলকত আহাম্মদ (কালা মিয়া) একজন সিএনজি অটোরিকশার চালক ছিলেন। বিগত ১৮ নভেম্বর ২০১০ ইং তারিখ সন্ধ্যা আনুমানিক ১৮০০ ঘটিকায় ভিকটিম ফেনীর পরশুরাম সিএনজি স্টান্ড হতে একজন যাত্রী নিয়ে ফুলগাজী থানাধীন মুন্সিরহাট নামক স্থানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। এরপর থেকে ভিকটিমের আত্মীয়স্বজনরা ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পান। গভীর রাত হয়ে গেলেও ভিকটিম বাড়িতে ফিরে না আসায় তার আত্মীয়স্বজনরা শহরের বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। পরদিন ১৯ নভেম্বর ২০১০ খ্রিঃ তারিখ রাত আনুমানিক ০৩০০ ঘটিকায় ভিকটিমের ভাই স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন যে ফুলগাজী থানাধীন ধলিয়া জগতপুর এলাকায় একটি অজ্ঞাত লাশ পাওয়া গেছে। পরবর্তী তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে অজ্ঞাত লাশটি তার ভাইয়ের বলে শনাক্ত করেন। নিহত ভিকটিমের ডান চোখের উপরে ধারালো অস্ত্রের রক্তাক্ত গভীর কাঁটা জখম এবং উভয় কানে, বাম চোয়ালে এবং পুরুষাঙ্গে রক্তাক্ত জখম দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু ভিকটিমের সিএনজি অটোরিকশা ও মোবাইল ফোন পাওয়া যায়নি। উক্ত অমানবিক ও পাশবিক চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি সে সময় সারাদেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
উক্ত ঘটনায় নিহতের ভাই মোঃ মোঃ ফখরুল বাদী হয়ে ফেনী জেলার ফুলগাজী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-০৩, তারিখ- ১৯ নভেম্বর ২০১০, জি আর নং-১১৯/২০১০, ধারা- ৩০২/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০।

পরবর্তীতে ফুলগাজী থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তের মাধ্যমে আসামীদের সনাক্ত করেন এবং বর্ণিত হত্যা মামলায় আটককৃত তিনজন আসামী বিজ্ঞ আদালতের নিকট স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। আসামীগনের জবানবন্দি হতে স্পষ্ট যে, তারা জেনে বুঝেই ভিকটিমের সিএনজি ও মোবাইল ফোন লুট করার জন্য ভিকটিমকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা নির্দয় ও নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তদন্ত ও প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমানে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০ জন আসামীর নামে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
পরবর্তীতে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালত মামলার বিচারকার্য শুরু করেন। আসামীরা দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত পুলিশের তদন্ত এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য শেষে আসামীদের অনুপস্থিতিতে গত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে ভিকটিম মোঃ মুলকত আহাম্মদ @ কালা মিয়া’কে হত্যার দায়ে আসামী সুমন চন্দ্র রায় (৪৩) কে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং ০৩ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে যে, বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী সুমন চন্দ্র রায় আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনামে রংপুর জেলার মাহিগঞ্জ এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, ও র্যাব-১৩ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল গত ১৩ জুন ২০২৩ খিঃ তারিখে বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী সুমন চন্দ্র রায় (৪৩), পিতা- হারাধন চন্দ্র রায়, সাং-পূর্ব দুর্গাপুর, থানা- জোরারগঞ্জ, জেলা-চট্টগ্রাম’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত হত্যাসহ ডাকাতি মামলার যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত এবং ৪০,০০০/- টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আরও স্বীকার করে ভিকটিম মোঃ মুলকত আহাম্মদ @ কালা মিয়া’কে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যার পর সে আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে ছদ্মনাম ধারণ করে দীর্ঘ ১৩ বছর রংপুর এলাকায় বসবাস করে আসছে।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।