
লহ হে মহাভিক্ষু শেষ
অর্ঘ্য মম
––ড.দীপংকর শ্রীজ্ঞান বড়ুয়া
বোধিমিত্র মহাথের, একটি নাম,বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন করে সংযোজিত হলো, বাঙালি বৌদ্ধদের অন্তরে চির স্থান করে নিল। জীবন খুব একটা দীর্ঘ নয়, কিন্তু সদ্ধর্ম ও সমাজের কল্যাণে নিরন্তর কাজ করে যে কীর্তি সৃষ্টি করেছেন তজ্জন্য তিনি “সদ্ধর্মশাসনরত্ন ” অভিধায় বিভূষিত হয়েছিলেন। আমরা কী কেউ ভাবতে পেরেছিলাম যে মাত্র ৬৫ বছর বয়সে তাঁকে হারাতে হবে!
তাঁকে হারানোর বেদনায় আজ পাঁচরিয়া গ্রামবাসী, সমগ্র বৌদ্ধ সমাজের জনগণ শোকাভিভূত, বেদনাহত। আপনার কী এতটা তাড়া ছিল অসময়ে চলে যাবার! আজ গ্রামবাসী প্রিয়বিয়োগ বেদনায় গুমরে গুমরে কাঁদছে।
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ আপনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে, অমৃতলোকে।কিন্তু আমরা তো কেউ চাই নি আপনি এত স্বল্প সময়ে চলে যাবেন। আমাদের আপ্রাণ প্রচেষ্টা ছিল, আমাদের চেষ্টায় কী কোনো ত্রুটি ছিল? হয়ত বা ছিল, অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি যদি হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমা করে দেবেন।
নাম-রূপ দেহের নামহীন রূপ আজ প্রায় ছয় মাস অবধি আমাদের সামনে ছিল, মনে হতো বোধিমিত্র মহাথের এখনো আমাদের মাঝে আছেন। আজ রূপকায় সর্বভুক হুতাশনের কাছে স্বহস্তে তুলে দিয়ে নিজেদের যে বড়ো রিক্ত আর অসহায় মন হচ্ছে।
আপনাকে তো বাল্যকাল থেকে দেখেছি কতো শান্তশিষ্ট অথচ একান্ত আত্মপ্রত্যয়ী শিশু বালক কালে সমাজের ও সদ্ধর্মের সংকটে হাল ধরে সকল বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন। আপনার যোগ্য নতৃত্বে সমাজ সদ্ধর্ম নিঃসন্দেহে এগিয়েছে। আজ আপনার অভাব তিলে তিলে উপলব্ধি করছি।
কতো কথাই না মনে ভীড় করছে, কোনোটাই ভালো করে প্রকাশ করতে পারছি না।
ভন্তে, হুতাশনের লেলিহান শিখায় আপনার প্রণহীন রূপকায় যখন দাউ দাউ করে জ্বলছিল, তখন আমাদের দেহমনও যেন অনলের তীব্র দাহনে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে।
জানি, ‘অনিচ্চা বত সংখারা’, তবু মনে হয় যদি আরো কিছু দিন ধরে রাখতে পারতাম!
সেই একই কথা,
” এ অনন্ত চরাচরে
স্বর্গমর্ত্য ছেয়ে,
সবচেয়ে পুরাতন কথা সবচেয়ে গভীর ক্রন্দন,
যেতে নাহি দিব হায়
তবু যেতে দিতে হয়
তবু চলে যায়। “
যদি কখনো জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে ভুল করে মনোকষ্টের কারণ হই তজ্জন্য “খমতু মে ভন্তে। “
যেখানে যাবেন খুব ভালো থকবেন।
পুনশ্চ : আমাকে আপনার জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপন পরিষদের মহাসচিব-এর দায়িত্ব প্রদান করে পাঁচরিয়া গ্রামবাসী যে আন্তরিক ভালোবাসা প্রদর্শন করেছেন, আমি অতীব আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ। জানি আমার যোগ্যতার অনেক ঘাটতি আছে, তৎসত্বেও জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপন পরিষদের সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতায় এ গুরদায়িত্ব সুচারুরূপে সুসম্পন্ন করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। সফলতার বিচার জনগণের ওপর।
আমি মনে করি সব সাফল্য কর্পরিষদের সদস্যবৃন্দের,আর ব্যর্থতা
একান্তভাবেই আমার।
সকলের জন্য আন্তরিক শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ রইলো।
নিউজটি পড়েছেন : ১৫২