শুক্রবার,২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঢাকায় দক্ষিন এশিয় লিভার কনফারেন্সের শুভ সূচনা

ঢাকায় দক্ষিন এশিয় লিভার কনফারেন্সের শুভ সূচনা

শ‌হিদুল ইসলাম

সি‌লেট মহানগর প্রতিনিধিঃ-পহেলা  সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ঢাকা সেনানিবাসে বিএএফ বেস বাশারে হোটেল এ্যাম্পাইরিয়ানে দক্ষিন এশিয়ার লিভার বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিধিত্বশীল পেশাজীবি সংগঠন সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভার (সাসেল)-এর নবম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলংকা, মায়ানমার ও আফগানিস্থানের লিভার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত সাসেলের যাত্রা শুরুটাও হয়েছিল ঢাকাতেই ২০১৩ সালে। তারপর দীর্ঘ দশ বছর বিরতিতে সাসেল আবার ঢাকায় ফিরে এসেছে। সম্মেলনের সাইন্টিফিক সেশনগুলো ২-৩ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের দৃষ্টিনন্দন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।

সম্মেলনটি উপলক্ষে বানী প্রদান করেছেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি। মহামন্য রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে আমাদের এই অঞ্চলে লিভার চিকিৎসা ও গবেষনার প্রসারে এই সম্মেলনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বানীতে বিগত সময় দেশের স্বাস্থ্যখাতের বিকাশে তার সরকারের গৃহীত কর্মসূচীগুলো তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি ন্যাসভ্যাক আবিস্কারসহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষনা এবং দেশে লিভারের আধুনিক চিকিৎসার প্রচলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা করেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুজনই ঢাকায় অনুষ্ঠানরত সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের বার্ষিক সম্মেলনটির সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করেন।

সাসেল সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আসন অলংকৃত করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র জনাব আতিকুল ইসলাম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব আতিকুল ইসলাম প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন যে দক্ষিন এশিয়ার করেনা লিভার বিশেষজ্ঞদের সাথে লিভার চিকিৎসায় সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে মতবিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞরা নিজেদের আরো শানিত করার সুযোগ পাবেন। তিনি ঢাকায় অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে ঢাকায় অবস্থানকালে তাদের সর্বাত্মক সহযোগীতার আশ্বাস দেন।

সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভার এর সভাপতি ভারতের অধ্যাপক ডা. শিব রাম প্রসাদ সিংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের সাইন্টিফিক কমিটির চেয়ারম্যান, জাপান প্রবাসী প্রথিতযশা চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও ন্যাসভ্যাকের অন্যতম আবিষ্কারক ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের সাধারন সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের ডিভিশন প্রধান এবং ন্যাসভ্যাকের আরেক সহ-উদ্ভাবক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ লিভার বিশেষজ্ঞদের জাতীয় সংগঠন এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব লিভার ডিজিজেস বাংলাদেশের সভাপতি এবং দেশের প্রবীন লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যপক ডা. সেলিমুর রহমান এবং রোটারী ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮৩ বাংলাদেশের ডিস্ট্রিক গভর্নর নমিনি রোটারীয়ান শহিদুল বারী।

অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি দেশে লিভার রোগীদের নিরলসভাবে সেবা প্রদান, লিভার চিকিৎসায় নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি প্রচলন এবং লিভার গবেষনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০৪১ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে দেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের ভূয়ষী প্রশংসা করেন। অন্যদিকে রোটারীয়ান শহিদুল বারী জানান যে বাংলাদেশের রোটারীয়ানরা এদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের সাথে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জন তথা বাংলাদেশ থেকে হেপাটাইটিস বি নির্মূলে যুগপতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান যে ২০২৩-২৪ রোটারীবর্ষে তারা এদেশের এক লক্ষ মানুষকে হেপাটাইটিস বি-ভাইরাসের জন্য বিনামূল্যে গ্রিনিং কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসবেন এবং পাশাপাশি দশ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন প্রদান করবেন।

উল্লেখ দক্ষিন এশিয়ার লিভার বিশেষজ্ঞদের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ তিনদিন ব্যাপি এই লিভার সম্মেলনে সারা দেশ থেকে প্রায় তিন শতাধিক লিভার ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং দক্ষিন এশিয়া অঞ্চল ও তুরস্ক থেকে বিশ জনের অধিক লিভার বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহন করছেন। আশা করা যাচ্ছে দেশি-বিদেশী লিভার বিশেষজ্ঞদের পারস্পরিক মতবিনিময় এবং অধিকতর সহযোগীতায় ক্ষেত্র তৈরীতে এই সম্মেলনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও এই সম্মেলনে সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভার এবং ইউরোএশিয়ান গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিকাল এসোসিয়েশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হবেন যা ভবিষ্যতে এই দুই সংগঠনের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশে একটি পৃথক স্পেশালিটি হিসেবে হেপাটোলজির যাত্রা শুরু নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে তৎকালীন আইপিজিএমআর-এ। বর্তমানে দেশে প্রায় দেড়শ জন লিভার বিশেষজ্ঞ কর্মরত আছেন। এদেশে লিভার বিশেষজ্ঞরা যৌথভাবে হেপাটাইটিস বি-র নতুন ওষুধ ন্যাসভ্যাক আবিস্কারের কৃতিত্বের অধিকারী।

লিভার সিরোসিস রোগীদের হেপাটিক ভেনাস প্রেসার গ্রেডিয়েন্ট মাপা, লিভার ফেইলিওর রোগীদের চিকিৎসায় প্লাজমা এক্সেচেঞ্জ ও লিভার ডায়ালাইসিস, পিত্তনালীর চিকিৎসায় স্পাই গ্লাস এবং লিভার ক্যান্সার রোগীদের জন্য ট্রান্সআর্টারিয়াল কেমোএম্বোলাইজেশন এবং ইমিউন থেরাপীর মতন আধুনিক চিকিৎসাগুলো এখন দেশেই উপলব্ধ হচ্ছে আর এক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনটি। এছাড়াও রোটারী ইন্টারন্যাশনাল, সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সহযোগীতার মাধ্যমে লিভার রোগ বিষয়ক সচেতনতা তৈরী এবং হেপাটাইটিস বি সহ অন্যান্য লিভার রোগ প্রতিরোধেও দেশের লিভার বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখছেন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email