
>>>>>>>>>>>>>>>ভদন্ত শাসনারক্ষিত থেরো
বৌদ্ধ ধর্ম ও বাংলার বৌদ্ধরা এদেশের সুমহান ঐতিহ্যের ধারক ও মূল্যবান সম্পদ। তাঁদের ঋণ এদেশের জাতীয় জীবনে কত গভীর ও ব্যাপকতা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্ত দীর্ঘ দিনের অচেতন, দুরদর্শীহীনতা, বৌদ্ধ কৃষ্টি, সংস্কিৃতির প্রতি উদাসীন, নানা কুসংস্কার অপ-সংস্কৃতিতে বঙ্গীয় বৌদ্ধ সমাজ-সদ্ধর্মের স্বকীয়তা প্রায় ধ্বংসের পথে। চার পাঁচ দশক পূর্বেও বৌদ্ধদের ঘরে ঘরে ধর্মীয় কুসংস্কার আবরনে আচ্ছাদিত ছিল পুরো ধর্ম ও সমাজ ব্যবস্থা।এহেন ঘুনে ধরা কুসংস্কার ও অপ-সংস্কিৃতি মুক্ত একটি স্বচ্ছ বঙ্গীয় বৌদ্ধ সমাজ ব্যবস্থা গঠনে প্রাত:স্মরণীয় বিনয়ী সমাজ-সংস্কারক ভিক্ষুসংঘের অবদান চিরস্মরণীয়।

কিন্ত একবিংশ শতাব্দীতে এসে বড়ুয়া সমাজের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে, বিহার মন্দিরে বৌদ্ধ সংস্কিৃতির আবরনে ধুকে ধুকে খাচ্ছে অপ-সংস্কিৃতি। প্রায় বিহার মন্দির হয়ে উঠছে অপ-সংস্কিৃতির আঁতুড়ঘর। বড়ুয়া বৌদ্ধদের ধর্ম ও সমাজ ব্যবস্থা বিহার ভিত্তিক হলেও সমাজের প্রয়োজনে গড়ে উঠা বিহারসমূহ ধর্মীয় সংস্কিৃতির পরিবেশ থেকে যেন দিন দিন বিচ্যুত করছে আমাদের।তিনমাস উপোসথ সমাপ্তির পূর্ণতা নিয়ে আসে প্রবারণা এবং কঠিন চীবর দান। মূলত বাংলাদেশী বৌদ্ধদের এই দুইটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে ধর্মীয় উৎসব মূখর। কিন্ত ইদানিং অতি আধুনিকতা শব্দকে ব্যবহার করে এক দশকের ব্যবধানে ধর্মীয় ঐতিহ্য মৃদঙ্গ-কাসা জুরির তালে তালে বৌদ্ধ কীর্তনের সুর-ছন্দ, সাধুবাদ ও জয়ের ধ্বনি ভুলতে বসেছে একশ্রেণির যুব সম্প্রদায়।
এখন আর বৌদ্ধ কীর্তন নয়, সাধুবাদ বা জয়ের ধ্বনির পরিবর্তে হিন্দি আর পপ গানের তালে তালে মাতাল নৃত্যে প্রবারণার ধর্মীয় ফানুস হয়ে উঠেছে এক রঙ্গমহল। বড় বড় সাউন্ড সিস্টেম DJ ডেক্স’র উচ্চ শব্দে হিন্দি ও পপ গানের তালে তালে যুবক-যুবতীদের না নাচলে বৌদ্ধ ঐতিহ্য- সংস্কিৃতির ফানুস উত্তোলন যেন পূর্ণতা পায় না।
প্রবারণায় হিন্দি গানের তালে তালে মাতাল হয়ে পটকা, বাজির বিকট শব্দে ভীতিকর পরিবেশে শত শত ফানুস উড়ানো এটি কোন ধর্মীয় উৎসব হতে পারে না।বৌদ্ধদের সকল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান হচ্ছে ত্যাগময়,শান্তি ও নিরবতাময় ধর্ম। তাই বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের এত প্রিয়, এত পবিত্রময়।
মাসব্যাপী চীবরদান বৌদ্ধদের জাতীয় ধর্মীয় উৎসবে রূপ নিয়েছে। বৌদ্ধসমাজ চীবর দানে দিনব্যাপী দান, শীল, ভাবনা অনুশীলন, ভিক্ষু-সংঘের ধর্মোপদেশ ও জাতি গঠনে শিক্ষামূলক দিকনির্দেশনা পায় পুরো মাস ব্যাপী চললেও চীবর দান শেষে প্রায় বিহারে নেমে আসে বৌদ্ধ ধর্মীয় সংস্কৃতি চর্চার নামে অপ-সংস্কিৃতির আয়োজন।
উচ্চ শব্দে আধুনিক বাদ্য-বাজনার ব্যান্ড শো’র তালে তালে মদ গাজায় মাদকাসক্ত হয়ে বৌদ্ধ যুব-যুবতী, শিশু-কিশোর, প্রবীন-নবীন, পিতা-পুত্র, মা-কন্যা, স্বামী-স্ত্রী সকলে একই কাতারে নাচা-নাচিতে ভিক্ষু-সংঘের তিন মাস বর্ষাবাসে এত কষ্টের অর্জিত ধর্মোপদেশ উন্মাদনায় গঙ্গাজলে ভেসে যায়।
অ-বৌদ্ধরাও মিশে যায় এই কাতারে। স্থান বিশেষে হচ্ছে শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা। বিহার সীমানায় রূপ নেয় দাঙ্গা-হামাঙ্গা, মারা-মারি। অবশেষে রূপ নিচ্ছে সাম্প্রাদায়িক ঘটনায়। নষ্ট করা হয় ধর্মীয় উৎসবের গাম্ভীর্যতা।এহেন পরিস্থিতিতে ধর্মীয় সংস্কিৃতিতে অপ-সংস্কিৃতির আগ্রাসন ঠেকাতে প্রবীন ও যুব সমাজের সহায়তা অত্যাবশ্যকীয়।