শুক্রবার,২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নদ-নদীর গুলোর নাব্যতা সংকটে নেত্রকেনায় ব্যহত হচ্ছে কৃষিকাজ

নেত্রকোনায় নদ-নদীর গুলোর নাব্যতা সংকটে, ব্যহত হচ্ছে কৃষি কাজ

নেত্রকোনা প্রতিনিধিঃ——

হাওর, নদ-নদী, খাল-বিল বেষ্টিত নেত্রকোনা জেলা। দীর্ঘদিন নদ-নদী ও খালগুলো খনন না করায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টির পানির সাথে চলে আসা বালি ও পলি জমে নেত্রকোনার বেশীরভাগ নদ-নদী ও খালগুলো ভরাট হয়ে নাব্যতা হারাচ্ছে। পলি জমে নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়ছে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র। নদ-নদীগুলোতে পানি সংকটের কারণে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ কালের বিবর্তনে আজ বিলুপ্তির পথে। নদ-নদীর গতিপথ ছোট হয়ে যাওয়ায় নদীর বুকে আজ আর দেখা মিলেনা পালতোলা বাহারি নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। নদ-নদীর পানি ধরে রাখতে না পাড়ায় ব্যহত হচ্ছে সেচ কাজ।

নেত্রকোনা জেলা পনি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলায় ৭টি বড় নদ-নদীসহ মোট ১২২টি ছোট বড় নদী ও খাল ছিল। জেলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া বৃহৎ ৭টি নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৩৩৪ কিলমিটার ও ছোট বড় ১১৫টি নদীর দৈর্ঘ্য ৫১২৫.৬ কিলোমিটার। দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারি উদ্যোগে এসব নদ-নদী খনন না করায় এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টির পানির সাথে নেসে আসা বালি ও পলি পড়ে বেশীরভাগ নদ-নদী বর্তমানে ছোট খালে পরিণত হয়েছে।

পনি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন উপজেলার নদ-নদী ও খালের পরিসংখ্যানে জানাযায়, নেত্রকোনা জেলার ১২২টি নদ-নদীর মধ্যে বড় ৭টি নদী হলো কংশ, মগড়া, সোমেশ্বরী, উব্দাখালী, ধনু, ভোগাই ও গুমাই। ছোট ১১৫টি নদীগুলো বর্তমানে খালে পরিণত হয়েছে। নেত্রকোণা সদরে ১৮টি খাল রয়েছে। সেগুলো হলো- হরিখালি, নাপিতখালি, ডুপিংখালী, মগড়া, খোশাই, ঝিটাই, রেজখালী, গুরিয়ার, নগুয়া, ঠাকুরকোণা, চুচিয়া, ধলাই, দরিজাগি, সিদলী, জাহাঙ্গীরপুর, বালচ, মরাখালী ও তিলকখালী খাল।

দূর্গাপুর উপজেলায় ৯টি ছোট বড় খাল রয়েছে। সেগুলো হলো- নালিয়া আগা, ছুখাই খালী, বালচ নদী, ঝিনাইগাতি, আরবাখালী, নাহিতখালী, সত্তর মুন্সি, বানেস্বরী ও পাগরিয়া খাল।

কলমাকান্দা উপজেলায় ১৪টি ছোট বড় খাল রয়েছে। সেগুলো হলো- জাঙ্গার, গুতুরা, সিদ্ধখলা, আরিন্দাখালী, গোবিন্দপুর, বড়ইউন্দু, গোলামখালী, মান্দাউড়া, মহাদেও নদী, বাইন বিল, শ্যামপুর, গুমাই নদী, দিলুরা ও ভোগাই খাল।

কেন্দুয়া উপজেলায় ১৬টি খাল রয়েছে। সেগুলো হলো- রাজি, সাইডুলি, পাটেশ^রী, হুচিয়া, তুরুকপাড়া, ডুমরি, রাজপত, ওয়াই, চরপুর, সান্দিকোণা, কলতরিল, কুরদিঘা, সুতি, কচন্দরা, বালকি ও সামুকজানি খাল।

বারহাট্টা উপজেলায় ২৬টি খাল রয়েছে। সেগুলো হলো- মরা কংশ, মরা বিশনাই, বড় ধলা, ঘালিয়ামারি, নানিয়া চাটগাঁও, নয়া বিল, পিয়াইন, দত্তখিলা, ঘাবারকান্দা, বারই, আমতলা, চাপারকোনা, ধলেশ্বরী, বাঘাইর, মহেশখালী, ধলা, গুলামখালী, রৌহা, নন্দী বাড়ী, বড়াপাড়া, টংগা, কান্দাপাড়, বড়িখাল, কামালপুর, শিববাড়ী ও বালিজুড়ী খাল।

পূর্বধলা উপজেলায় ১১টি খাল রয়েছে। সেগুলো হলো- কালিহর, বালিয়া, লাউয়ারী, ফলাখালী, খসখসিয়া, বারাবারির, ধলাই, মরা, পাছুয়া, বলজানা ও সুয়াইর খাল।

মোহনগঞ্জ উপজেলায় ৭টি খাল রয়েছে। সেগুলো হলো-ঘোড়াউত্রা, মরা ধলাই, বেলদরিয়া, দাইরের, কলুংকা, পাপমারা ও নৌকা ভাঙা খাল।

খালিয়াজুরী উপজেলায় ৭টি খাল রয়েছে। সেগুলো হলো-বিশ্বহরি ডুলিয়াজান, ডুলনিরখাল, সেলা, পুটিয়া, নাইয়রী, বয়রা ও বৌলাই খাল।

মদন উপজেলায় ৫টি খাল রয়েছে। সেগুলো হলো-বালুই, বয়রাহালা, নাসিরখালী, পাতুনিয়া ও আন্দারমানিক খাল।

আটপাড়া উপজেলায় ২টি খাল রয়েছে। সেগুলো হলো- পাগলাখালী ও পঞ্চখালী খাল।

বিভিন্ন্ তথ্যসূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী এসব নদী ও খালের বিভিন্ন অংশ নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে তাদের দখলে নিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ ধরে ধান চাষ করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য কারণে এ ব্যাপারে নীরব থাকেন বলে, সচেতন মহলের ধারণা। একদিকে অসহায় জনগণ নদীর উপকারীতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অপরদিকে সরকার বিপুল পরিমাণের রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কংশ, মগড়া, সোমেশরী, উব্দাখালী ও ধনু নদীর দুই পাড়ের অসহায় কৃষকরা জানান, আগে তারা নদীর পানি দিয়ে বোরো ফসলের মাঠে সেচ দেওয়ার কোনো চিন্তা করতে হতো না। এখন নদীতে পানির পরিমান কমে যাওয়ায় জমিতে সেচ দেয়ার মতো পানি পানিই থাকেনা।

তারা আরো জানান, এলাকার জেলেরা নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের দখলে থাকায় মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত হয়েছে জেলেসহ সাধারণ জনগণ। দুই তীরে যাদের জমি আছে তারাই নদী দখলে নিচ্ছে। যাদের জমি নেই তারাও ধান লাগানোর ছলনায় নদী দখল করছে। কেউ কেউ সুবিধা অনুযায়ী নদী থেকে বালি উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। আবার অনেক জায়গায় অবৈধ ভাবে ইটের ভাটা বসিয়ে রমরমা ব্যাবসা করছে।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সারোয়ার জাহান জানান, কৃষি কাজে সেচের পানি ধরে রাখার লক্ষ্যে গত অর্থ বছরে ১০টি খাল খনন করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে আরো ৫টি খাল খনন করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, নদী থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হবে। নদীর নাব্যতা রক্ষা ও সারা বছর সেচের পানি ধরে রাখার লক্ষ্যে যে সব নদ-নদী খননের প্রয়োজন তার একটি তালিকা তৈরী করে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email