শনিবার,১৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জাতীয় সঙ্গীত –মুন্সী আবু বকর

জাতীয় সঙ্গীত
–মুন্সী আবু বকর

জাতীয় সঙ্গীত কেবল কতগুলো সুর বা শব্দের সমষ্টি নয়; এটি একটি জাতির হৃদস্পন্দন, তার আত্মপরিচয় ও ঐক্যের মূর্ত প্রতীক। এর প্রতিটি ধ্বনি, প্রতিটি শব্দ যেন সেই জাতির দীর্ঘ ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের প্রতিচ্ছবি ধারণ করে। জাতীয় সঙ্গীত একটি জাতিকে একসূত্রে গাঁথে, তাদের মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত করে এবং ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা যোগায়।

একটি জাতির ইতিহাস তার জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যে জীবন্ত থাকে। এর সুর ও বাণীর মাধ্যমে আমরা সেই সময়ের প্রেক্ষাপট, সংগ্রাম এবং অর্জিত বিজয়ের মাত্রা অনুভব করতে পারি। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত, ‘আমার সোনার বাংলা’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি কালজয়ী সৃষ্টি। এর প্রতিটি পঙ্‌ক্তি যেন আমাদের প্রকৃতির মনোরম রূপ, ভাষার মাধুর্য এবং বাঙালির অদম্য স্পৃহাকে তুলে ধরে। এই গান আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে এবং আজও প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে একই আবেগ সৃষ্টি করে।

সংস্কৃতি একটি জাতির পরিচয় বহন করে। জাতীয় সঙ্গীতের সুর ও বাণীর মধ্যে সেই জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রতিফলিত হয়। ‘আমার সোনার বাংলা’র সুর বাউল ও লোকসংগীতের ঐতিহ্যের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত, যা আমাদের মাটির গান, আমাদের প্রাণের সুর। এই গান শোনার সাথে সাথেই আমরা যেন আমাদের শিকড়ের কাছে ফিরে যাই, আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে একাত্ম হই।

জাতীয় সঙ্গীত কেবল অতীতের স্মৃতিচারণ নয়, এটি একটি জাতির বর্তমান ঐক্য ও সংহতিরও প্রতীক। যখন একটি অনুষ্ঠানে সকলে একসাথে জাতীয় সঙ্গীত গায়, তখন তাদের মধ্যেকার ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একটি অভিন্ন পরিচয় তৈরি হয় – তারা সকলেই সেই দেশের নাগরিক। এই সমবেত কণ্ঠ যেন একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে, যা জাতিকে যেকোনো প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে সাহস যোগায়। খেলাধুলা, জাতীয় অনুষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে জাতীয় সঙ্গীতের পরিবেশনা সকলের মধ্যে একাত্মতা ও দেশপ্রেমের ভাবনাকে আরও দৃঢ় করে।

একটি জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্নও তার জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যে নিহিত থাকে। এর বাণী তরুণ প্রজন্মকে তাদের পূর্বপুরুষদের ত্যাগ ও আদর্শের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে। জাতীয় সঙ্গীতের আবেগ ও উদ্দীপনা নতুন প্রজন্মকে তাদের দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যপরায়ণ হতে শেখায়।

জাতীয় সঙ্গীত একটি জাতির জন্য অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। এটি তার আত্মপরিচয়, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐক্যের প্রতীক। তাই, জাতীয় সঙ্গীতকে সম্মান করা প্রতিটি নাগরিকের পবিত্র কর্তব্য। এটিকে অপমান করা শুধু কতগুলো সুর বা শব্দের অবমাননা নয়, বরং এটি সেই জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি, সংগ্রাম এবং ভবিষ্যতের স্বপ্নের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করার শামিল। আমাদের উচিত জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা রক্ষা করা এবং এর অন্তর্নিহিত ভাবার্থ অনুধাবন করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া।

পরিশেষে বলা যায়, জাতীয় সঙ্গীত একটি জাতির আত্মা। এর সম্মান রক্ষা করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। আসুন, আমরা সকলে মিলে আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখি এবং এর মাধ্যমে আমাদের জাতীয় ঐক্য ও আত্মপরিচয়কে আরও সুদৃঢ় করি।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email